নিউজ ডেস্ক :: ভাসানচরের অবকাঠামো ও সামগ্রিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্প দেখতে ৪০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল বর্তমানে ভাসানচরে রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা ভাসানচরের আবাসন গৃহসমূহের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন।
গত শনিবার ভোরে উখিয়া থেকে তারা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম পৌঁছান। সেখান থেকে সমুদ্রপথে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শনিবার সন্ধ্যায় ভাসানচরে পৌঁছান। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতা ভাসানচরের অবস্থা ও পরিবেশ এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গেলেন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর তাদের ফিরে আসার কথা রয়েছে। সরকারের আশা, রোহিঙ্গা নেতারা দেখে এসে অন্যদের বোঝালে তারা ভাসানচর যেতে রাজি হবেন।
প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য মোহাম্মদ হারুন তিনি মোবাইল ফোনে আজ রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ভাসানচরের আবাসন প্রকল্প তার খুব ভালো লেগেছে। এখানে মসজিদ, বাচ্চাদের জন্য স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, খেলার মাঠ ছাড়াও প্রতিটি আবাসন প্রকল্পের ভেতর পুকুর রয়েছে। হারুন জানান, সাগরের মাঝে পুকুরের পানি খুবই সুস্বাদু। যা তার কল্পনার বাইরে।
ভাসানচর পরিদর্শনে যাওয়া মোহাম্মদ হারুন উখিয়ার ১০১৭ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের এই সদস্য জানান, তার মতো দলের অধিকাংশ সদস্য আবাসন প্রকল্পের পরিবেশ দেখে সন্তুষ্ট।
ভাসানচর পরিদর্শনে যাওয়া রোহিঙ্গ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বিভিন্ন ক্যম্পের হেড মাঝি, মাঝি এবং মসজিদের ইমাম। তারা ভাসানচর পরিদর্শন শেষে কক্সবাজার ফিরে রোহিঙ্গাদের কাছে সেখানকার অবস্থা বর্ণনা করবেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যদের ভাসানচরের আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করানো একটি মোটিভেশনাল কার্যক্রম। ভাসানচরে গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্প পরিস্থিতি অবহিত করার জন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের বাছাই করা ৪০ ব্যক্তিকে এখানে পাঠানো হয়েছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সরেজমিনে ভাসানচর আবাসন প্রকল্প পরিদর্শন করে সেখানে থাকা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হবেন। সরকারের আশা, রোহিঙ্গা নেতারা দেখে এসে অন্যদের বোঝালে তারা ভাসানচর যেতে রাজি হবেন।
চট্টগ্রাম থেকে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া নৌবাহিনীর জাহাজের কর্মকর্তা কমোডর মামুন জানান, শনিবার সন্ধ্যার আগে ভাসানচরে পৌঁছান। সকাল থেকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আবাসন প্রকল্পের একাংশের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। আগামীকাল বাকি অংশ দেখবেন। নৌবাহিনীর এই কর্মকর্তা জানান, এখানে কক্সবাজারের চেয়ে ভালো সুবিধা রয়েছে। ভাসানচরের পানি অসাধারণ। এত সুমিষ্ট পানি কল্পনা করা যায় না।
বঙ্গোপসাগরের ভাসানচরে সরকার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে, যাতে কমপক্ষে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে। আবাসন প্রকল্প ঘিরে প্রায় ১৩ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মাণ করা হয়েছে। একই সাথে ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার, প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও চিকিৎসা অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও জাতিসংঘের সম্মতি না থাকায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচর স্থানান্তর স্থগিত রাখা হয়েছে। কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থীশিবিরের পরিবর্তে তুলনামূলক ভালো ও খোলামেলা স্থানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগী হিসেবে প্রত্যাশা করছে সরকার। সংস্থাগুলো সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং স্বেচ্ছায় স্থানান্তরের শর্ত আরোপ করেছে।
বর্তমানে ৩০৩ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে বসবাস করছে, যারা বিভিন্ন সময় সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বঙ্গোপসাগরে উদ্ধার হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও চিকিৎসার মতো মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করছে।
বর্তমানে কক্সবাজারের ক্যাম্পসমূহে কমপক্ষে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি ক্যাম্পে তারা নানাধরনের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ঘরবসতিপূর্ণ হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের অপরাধচক্র সেখানে অধিপত্য বিস্তার করছে। এসব কারণে রোহিঙ্গাদের তুলনামূলক ভালো আবাসনে স্থানান্তর প্রয়োজন বলে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছে।
আরআরআরসি সুত্র জানায়, ভাসানচর পরিদর্শনশেষে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যদি ক্যাম্পে থাকা অন্য রোহিঙ্গাদের ভাসানচর সম্পর্কিত ধারণা দিয়ে রাজি করাতে পারে তখন যেকোনো সময় তাদের ভাসানচরে পাঠানো হবে। সেখানে কক্সবাজারের চেয়েও অনেক ভালোভাবে তারা বসবাস করতে পারবে।
পাঠকের মতামত: